বাসায় রান্নার কাজে মায়ের ছায়াসঙ্গী তিনি। মায়ের কাছেই শিখেছেন দেশীয় নানা পদের খাবারের রান্না। পরিবার, স্বজন, প্রতিবেশী- যারাই তার রান্না করা খাবার খেয়েছেন, প্রশংসায় মেতেছেন সবাই। কাছের মানুষদের এই প্রশংসা তার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। দেশীয় খাবারের বাইরে ইউটিউব দেখে, বই পড়ে নানান দেশের নানা পদের খাবার রান্না করা শুরু করেন তিনি। হয়ে উঠেন পরিবারের ‘ওয়ার্ল্ড ক্লাস’ হোম শেফ।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির মেয়ে সাদিয়া তাহেরের রান্না বিষয়ক গল্প এখানেই শেষ হতে পারতো। তবে হয়নি। কুকিং রিয়েলিটি শো ‘সেরা রাঁধুনী ১৪২৭’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিজের রান্নার সুনাম পরিবার থেকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন নগরীর ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির এই শিক্ষার্থী। প্রতিযোগিতার জাঁকজমক চূড়ান্ত পর্বে খুলনা এবং ঢাকার দুই প্রতিযোগীকে হারিয়ে দেশসেরা রাঁধুনীর মুকুট এখন তারই।
হোম শেফ থেকে দেশসেরা রাঁধুনী হওয়ার গল্প শোনা যাক সাদিয়া তাহেরের মুখ থেকেই। সাদিয়া জানান, অডিশনের দিন ডেজার্ট আইটেম তৈরি করেছিলাম। কখনো ভাবিনি, এতো ভালো ভালো রাঁধুনীর মধ্যে টিকতে পারবো। তবে অডিশনে টিকে যাওয়া পর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। সারাদেশ থেকে ২৮ জন প্রতিযোগী নিয়ে শুরু হয় মূল প্রতিযোগিতা। গ্র্যান্ড সিলেকশনে বাদ পড়েন ১৩ জন। বাকি ১৫ জনকে নিয়ে গাজীপুরের একটি রিসোর্টে শুরু হয় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।
সাদিয়া বলেন, আমাদের ১৫ জনকে নিয়ে শুরু হয় সেরা রাঁধুনী ১৪২৭ এর যাত্রা। টানা ৫ দিন রান্নার বিষয় নিয়ে আমাদের গ্রুমিং করানো হয়। অনেক কিছু শিখেছি এই গ্রুমিংয়ের মাধ্যমে। এরপর প্রতি পর্বে একেক করে প্রতিযোগীরা বাদ পড়তে থাকেন। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় সবাইকে। তবে প্রতি পর্বেই নানা পদের রান্নার চ্যালেঞ্জ জয় করে টিকে যাই আমরা ৩ জন। কক্সবাজারে ফাইভ স্টার কিচেন সামলানোর ‘রেস্টুরেন্ট চ্যালেঞ্জ’ এবং ‘সি-ফুড চ্যালেঞ্জ’ এর মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। এরপর চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি করা হয়। সেখানে জয়ী হই।
দেশে ২০০৬ সালে প্রথম ‘সেরা রাঁধুনী’ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এবার ছিলো প্রতিযোগিতার ৬ষ্ঠ মৌসুম। ছয় মাসেরও বেশি সময়ের এই প্রতিযোগিতা শেষে গত ৯ জুলাই ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত গ্র্যান্ড ফিনালেতে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। অভিনব সব চ্যালেঞ্জে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর সেরা তিনের অন্য ২ প্রতিযোগী খুলনার নাদিয়া নাতাশা এবং ঢাকার মরিয়ম হোসেন নূপুরকে হারিয়ে সেরা রাঁধুনী ১৪২৭-এর বিজয়ী হন সাদিয়া তাহের। বিজয়ী হিসেবে তাকে দেওয়া হয় ১৫ লাখ টাকা।
মেয়ের এই সাফল্যে দারুণ আপ্লুত সাদিয়া তাহেরের মা শাহনাজ তাহের। রত্নগর্ভা এই মা বলেন, সাদিয়া রান্না করতে খুব ভালোবাসে। সবাইকে নিজের রান্না খাওয়াতে পছন্দ করে। আমার পরিবারের ‘ওয়ার্ল্ড ক্লাস’ হোম শেফ এখন দেশ সেরা রাঁধুনী- এটা ভাবতেই ভালো লাগছে। আমরা সবাই ওর এই সাফল্যে গর্বিত।
Discussion about this post