কক্সবাজার প্রতিনিধি :২৯জুলাই
কক্সবাজার জেলায় ভারিবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। অতিবর্ষণে পাহাড় ধস ও পাহাড়ি ঢলে জেলায় মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলছে। বুধবার পাহাড় ধসে একই পরিবারের পাঁচজনসহ ৬ জন ও ঢলে পানিতে তলিয়ে গিয়ে আরও ৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর আগে মঙ্গলবার আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে দুই দিনে মোট ২০ জনের মৃত্যু হলো।
গতকাল বুধবার ভোরে পাহাড় ধসে মাটিচাপায় টেকনাফের হ্নীলায় একই পরিবারের ৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন-টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের পাহাড়ি গ্রাম ভিলেজার পাড়া এলাকার সৈয়দ আলমের ছেলে আব্দু শুক্কুর (১৬), মোহাম্মদ জুবাইর (১২), আবদুর রহিম (৫), মেয়ে কহিনুর আক্তার (৯) ও জয়নবা আক্তার (৭)। হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ মো. আলি জানান, রাত ২টার দিকে উপজেলারর হ্নীলা ইউনিয়নের ভিলেজারপাড়ার সৈয়দ আলমের বাড়িতে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সৈয়দ আলমের ৫ সন্তানের মৃতদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। এদিকে বুধবার বেলা ১২টার দিকে ঈদগাঁও উপজেলায় ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে দুই ভাইসহ তিনজন নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। এরপর বিকাল ৫টার দিকে দুইজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
মৃতরা হলেন- ঈদগাঁওয়ের দরগাহপাড়া এলাকার মোহাম্মদ শাহাজাহানের দুই ছেলে মোহাম্মদ ফারুক (২৬) ও দেলোয়ার হোসেন (১৫) এবং আবছার কামালের ছেলে মোহাম্মদ মোরশেদ (১৪)। ঈদগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ ছৈয়দ আলম জানান, টানা বর্ষণে ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে দুপুরে মাছ ধরতে যায় ওই তিনজন। তখন স্রোতের টানে তারা তলিয়ে যায়। ওই সময় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধারে তৎপরতা চালায় এবং ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। তারা এসে তিনজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
এছাড়াও মঙ্গলবার পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়া নিখোঁজ তিনজনের লাশ একদিন পর বুধবার উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতরা হলেন- রাজাপালং ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ধইল্যাঘোনা এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে আলী আকবর (২৫) একই ইউনিয়নের মালিয়ারকুল এলাকার মো. ইসলামের ছেলে মো. রুবেল (২২) ও উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের চোরাখোলা এলাকার মৃত আলী আহমদের ছেলে আবদুর রহমান (৪৫)। উখিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, নিহতের মধ্যে দুইজন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লেবার। তারা মঙ্গলবার কাজ শেষে ক্যাম্প থেকে ফেরার পথে মাছকারিয়া নামের একটি খাল পার হতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিল বলে জেনেছি। বুধবার ৩টার দিকে পৃথক স্থান থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জেনেছি।
তবে তাদের মধ্যে রুবেলের লাশ এখনো পর্যন্ত না পাওয়ার কথা জানিয়েছে তার পরিবার। বুধবার ভোরে মহেশখালি উপজেলায় হোয়ানকে ইউনিয়নে পাহাড় ধসে আলী হোসেন (৬৮) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তিনি রাজুয়ার ঘোনার মৃত রফিক উদ্দিনের ছেলে। ঘুমন্ত অবস্থায় পাহাড় ধসে তার বাড়ির উপর পড়লে তিনি মারা যান বলে জানান স্থানীয়রা। এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ায় ১০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভারি বর্ষণে পাহাড় ধসে পাঁচ রোহিঙ্গাসহ জেলা মোট ৮ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
এ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় পাহাড় ধস ও পাহাড়ি ঢলে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকার আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান জানিয়েছেন, মঙ্গলবারের মতো বুধবারও ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সোমবার ১২টা হতে বুধবার ১২টা পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টায় কক্সবাজার জেলায় ১৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামীকালও ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলসমূহে পাহাড় ও ভূমি ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজার জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, রামু, পেকুয়া, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এছাড়া কক্সবাজার শহরতলীর বাজারঘাটা, কলাতলী, চরপাড়া, কাঙ্গালী পাড়া, সমিতিপাড়া, নাজিরারটেক, সদর উপজেলার খুরুশকুল, চৌফলদন্ডী, পিএমখালী, পোকখালী, মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, ঘটিভাঙ্গা, পেকুয়া উপজেলার মগনামা, উজানটিয়া, চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরি, কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং, দক্ষিণ ধুরুং, আলী আকবর ডেইল ও তাবলারচর এলাকাসহ পাশবর্তী এলাকার অন্তত ৭০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। একইসঙ্গে সাগরের জলোচ্ছ্বাস ও পাহাড়ি ঢলে এক হাজার একরেরও বেশি চিংড়ি ঘের তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে পানের বরজ ও ধানসহ বিভিন্ন ফসল।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বলেন, গেল ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে পাহাড় ধস ও পাহাড়ি ঢলে পানিতে ডুবে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত সবাইকে ২৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহযোগিতা ও বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জন্য ১৫০ মেট্রিক টন চাল এবং ৫ লাখ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরতদের সরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসনের একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চলছে। এখন পর্যন্ত জেলার ৬০ হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে। তাদের সেখানে খাবার সরবারহ করা হচ্ছে।
Discussion about this post