ক্রীড়া ডেস্কঃ১০ আগস্ট
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে বাংলাদেশের প্রাপ্তির ঝুলি দারুণ সমৃদ্ধ। রেকর্ড, ইতিহাস, অর্জন, কত কী! তবে খটকার জায়গাও একটা আছে। ব্যাটিংটা খুব ভালো হয়নি এই সিরিজে। সেই খটকার পথ ধরে এগোলে অস্বস্তির কাঁটা হয়ে ফুটছে আরেকটি প্রশ্ন। এমন উইকেটে খেলে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সত্যিকার অর্থে কতটা আদর্শ হলো?
আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে হবে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেই আসরের আগে এই অস্ট্রেলিয়া সিরিজ, আগামী মাসের নিউ জিল্যান্ড সিরিজ বাংলাদেশের প্রস্তুতির সুযোগ। সূচিতে ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আরেকটি সিরিজ। তবে তা পিছিয়ে গেছে দেড় বছর।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের আগে কোচ রাসেল ডমিঙ্গো ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বলেছিলেন, সিরিজ জয় এবং বিশ্বকাপ প্রস্তুতি, দুটি লক্ষ্যই আছে তাদের। দুটির সমন্বয় করেই তারা এগোতে চান। সিরিজে যে উইকেটে খেলেছে বাংলাদেশ এবং যে কৌশল বেছে নিয়েছে, তাতে পরিষ্কার ফুটে উঠেছে, বিশ্বকাপ প্রস্তুতির চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে অস্ট্রেলিয়ানদের বিপক্ষে জয়। কিংবা জয়কেই মনে করা হয়েছে ভালো প্রস্তুতি।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট এমনিতেই বেশির ভাগ সময় মন্থর থাকে। বল পিচ করে একটু থমকে আসে। শট খেলা এখানে বরাবরই কঠিন। এমনকি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও, বিপিএল ও অন্যান্য ঘরোয়া আসরে এখানে বেশির ভাগ সময়ই রান বেশি হয় না। এবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে উইকেট ছিল স্বাভাবিকের চেয়েও মন্থর, টার্নও করেছে বেশ। বাউন্স কখনও কখনও ছিল অসমান।
অস্ট্রেলিয়ার মূল ব্যাটসম্যানদের প্রায় কেউই ছিল না এই সফরে। অনভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইন আপের বিপক্ষে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশ এই ধরনের উইকেটে সিরিজটি খেলতে চেয়েছে। বর্ষা মৌসুমে উইকেট স্যাঁতস্যাঁতে থাকায় তা ব্যাটিংয়ের জন্য হয়ে উঠেছে আরও কঠিন।
দুই দলের ব্যাটসম্যানরাই এখানে ধুঁকেছেন প্রবলভাবে। তবে অনুমিতভাবেই অস্ট্রেলিয়ানদের ভোগান্তি ছিল বেশি। বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে একটু কম ভোগায় এবং বোলিংয়ে তুলনামূলক ভালো করায় জিতে নিয়েছে সিরিজ।
বাংলাদেশ এটিই চেয়েছিল। সিরিজ জয়।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম পর্বের খেলাগুলি হতে পারে ওমানে। প্রত্যাশিতভাবে সেই ধাপ পেরিয়ে গেলে পরের পর্বের খেলা আবুধাবি, দুবাই ও শারজাহতে। কোনো মাঠেই উইকেট মিরপুরের মতো এতটা ব্যাটিং দুরূহ থাকবে না। শারজাহতে তো মাঠ ছোট, উইকেট বেশির ভাগ সময় ব্যাটিং স্বর্গ। ১৮০-২০০ সেখানে নিয়মিতই হয়। অন্য মাঠগুলো আকারে বড়, তবে উইকেট সাধারণত ব্যাটিং সহায়কই। যদিও বিশ্বকাপের আগে আরব আমিরাতে আইপিএল হবে প্রায় এক মাস ধরে। উইকেটগুলো অতি ব্যবহারে ক্লান্ত ও মন্থর হয়ে উঠতে পারে। তার পরও মিরপুরের মতো ১২০ রানেই জয়ের স্কোর হবে না নিশ্চিতভাবেই।
তবে ব্যাটিং কিংবা স্পোর্টিং উইকেটে খেলে হেরে যাওয়ার চেয়ে সহায়ক উইকেটে জয়ের বিশ্বাস পাওয়াকেই এই সিরিজে বেছে নিয়েছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আগে কখনও টি-টোয়েন্টি জেতেনি বাংলাদেশ, সিরিজ জেতেনি কোনো সংস্করণেই। এবার ছিল অপূর্ণতাগুলি ঘোচানোর সুবর্ণ সুযোগ, ডমিঙ্গো-মাহমুদউল্লাহরা তা হাতছাড়া করতে চাননি।
ক্রিকেটে একটা কথা প্রচলিতই আছে, ‘জয়ের চেয়ে আদর্শ প্রস্তুতি আর নেই।’ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে শারজাহ-দুবাইয়ের মতো উইকেট বানিয়ে খেলে হেরে গেলে, বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে তা খুব একটা কাজে লাগত বলে মনে হয় না। মনোবলই থাকত তলানিতে।
এই মনোবলকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন সাকিব আল হাসান। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের ম্যান অব দা সিরিজ, যাকে মনে করা হয় বাংলাদেশের সবসময়ের সেরা ক্রিকেটার ও ক্রিকেট মস্তিষ্ক যার খুব ক্ষুরধার এবং গত ১০ বছর ধরে যিনি ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে খেলে বেড়াচ্ছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট, সেই সাকিবের মতে জয়ের বিশ্বাসই দারুণ প্রস্তুতি।
“স্কোরকার্ড দেখে হয়তো অতটা আত্মবিশ্বাসী মনে নাও হতে পারে। তবে জিম্বাবুয়েতে সিরিজ জয়, এখানে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয়, এরপর নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে আছে, এসব আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাস জোগাবে বিশ্বকাপের দিকে এগিয়ে চলার পথে। আমার মনে হয় ভালো প্রস্তুতিই হবে।”
“যদিও ব্যাটসম্যানদের আন্ডারে হয়তো অত বেশি রান হবে না, যেহেতু আমরা মন্থর, নীচু বাউন্স ও টার্নিং উইকেটে খেলছি। কিন্তু দলের জয়ই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই আত্মবিশ্বাসটা থাকলে দলের ভেতর মোরাল অনেক ভালো থাকে এবং জেতার যে মানসিকতা, তা তৈরি হয়।”
শুধু জয়ই অবশ্য নয়, সাকিব দেখছেন স্কিলের প্রস্তুতিও। সেখানে ব্যাটিংয়ের ঘাটতির কথা তিনি বললেন আবারও, তবে তুলে ধরলেন বোলিংয়ের ভালো প্রস্তুতির কথা।
“সন্তুষ্ট অবশ্যই (সিরিজের পারফরম্যান্সে)। হয়তো প্রতি ম্যাচেই আমরা ১০-১৫ রান করে বেশি করতে পারতাম। একটা সময় ছিল, যেখানে এটা সম্ভব ছিল। তবে সেটা বলার পরও, উইকেট এতটাই কঠিন ছিল যে নতুন ব্যাটসম্যানের জন্য খুবই কঠিন ছিল। আসলে তাই ব্যাটসম্যানদের নিয়ে বলার কিছু নাই। আর একটা সিরিজ দিয়ে কাউকে বিচার করা ঠিক হবে না, কারণ কন্ডিশন খুব কঠিন ছিল ব্যাটসম্যানদের জন্য।”
“বোলিং সবমিলিয়ে…বোলিং তো আমরা প্রতিটি ম্যাচেই খুব ভালো বোলিং করেছি। আমার কাছে মনে হয়, পাঁচটি ম্যাচে বোলিংয়ের যে ধারাবাহিকতা ছিল, এটা যদি ধরে রাখতে পারি বিশ্বকাপ পর্যন্ত, আমাদের পক্ষে ভালো কিছু করা সম্ভব।”
সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জে পরের প্রতিপক্ষ নিউ জিল্যান্ড। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে তাদের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ এবং সব ম্যাচই মিরপুরে। কিউইরা এই সিরিজের জন্য অস্ট্রেলিয়ার চেয়েও অনভিজ্ঞ দল ঘোষণা করেছে। তাদের জন্য উইকেট ও কৌশল কেমন বেছে নেওয়া হয়, আপাতত কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে।
প্রস্তুতির জন্য এরপর থাকবে দেশে ক্যাম্প, বিশ্বকাপের আগে ওমানে সম্ভব্য ক্যাম্প। মুস্তাফিজুর রহমান, সাকিবরা খেলবেন হয়তো আইপিএলেও। প্রস্তুতির পর্যাপ্ত সুযোগ তাই আছে সামনেও। পেছনে থাকছে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ হারানোর সুখম্মৃতি।
Discussion about this post