হোসেন বাবলাঃ৩০ আগস্ট, চট্টগ্রাম
প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেছেন, আমরা প্রাণ প্রকৃতিকে ভালোবাসিনি বলেই করোনার মত একটি ভয়ঙ্কর অভিশাপে মানবজাতি বিপন্ন প্রায়। মানুষের বাসযোগ্য পৃথিবীর জন্য জীব বৈচিত্র্য এবং প্রকৃতিগত ভারসাম্য অপরিহার্য। চট্টগ্রাম নগরীর প্রাকৃতিক অবস্থানকে আমরা হত্যা করতে বসেছি।
সিআরবিতে প্রাকৃতিক এই ঐশ্বর্য্যকে বিপন্ন করে একটি বেসরকারি হাসপাতালের নির্মাণ অপচেষ্টা আর একটি ভয়ঙ্কর অভিশাপ হয়ে নেমে আসবে। এর বিরুদ্ধে এখন থেকেই সর্বাত্মক গণ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সম্প্রতি সিআরবি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচিত এক রাজনৈতিক নেতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা অত্যন্ত করুণ।
আপনি আমাদের ইন্ধনের কথা বলছেন, দেখি আপনিতো এমপি, সংসদে দাঁড়িয়ে এ স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের জন্য জিডিপির ২ পারসেন্ট বরাদ্ধের পরিবর্তে ৬ পারসেন্ট অর্থ বরাদ্ধের প্রস্তাব উত্থাপন করেন, যে অর্থ সাধারণের চিকিৎসা খাতে ব্যয় হবে। আমিও হাসপাতাল চাই, কিন্তু তা কোন ভাবেই সিআরবির বদলে নয়। গতকাল২৯ আগস্ট বিকেলে সিআরবিতে নাগরিক সমাজ- চট্টগ্রাম আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ননগর মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিবাদী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন বলেছেন, মীর জাফরেরা আজও সক্রিয় আছে। তারা পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট জাতির জনককে হত্যা করেছে। একুশে আগস্ট আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছে।আজ সেই মীরজাফরেরা চট্টগ্রামের ফুসফুস সিআরবিকে ধ্বংসের চক্রান্ত করছে। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, বীর চট্টলার নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী যে লাঠি হাতে নিয়েছিলেন, তার মধ্যে অনেকগুলো লাঠি আমার কাছে রেখে গেছেন। সেই লাঠিগুলো মা বোনদের হাতে তুলে দেব। তারপর নাগরিক সমাজের সাথে সিআরবি রক্ষায় এখানে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর শক্তিশালী ভূ প্রাকৃতিক অবস্থান ও সৌন্দর্য্যকে হানি করার জন্য মহল বিশেষ দীর্ঘকাল ধরে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। নগরীর পাহাড় কর্তন এবং পুকুর, ডোবা-নালা ভরাট করে অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে জলাবদ্ধতার মত একটি অভিশাপ আজ প্রকট হয়ে উঠেছে। একইভাবে চট্টগ্রামের ফুসফুস বলে পরিচিত সিআরবিতে বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য মহল বিশেষের প্রভাব ও চক্রান্ত আজ আমাদের সকলের মাথা ব্যাথা কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমরা চাই সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা সম্প্রসারণের জন্য হাসপাতাল হোক এবং এই হাসপাতাল করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর, রেল এমনকি সিটি কর্পোরেশনের অব্যবহৃত অনেক জায়গা আছে। সে সমস্ত জায়গায় বড় বড় হাসপাতাল হতে পারে। কিন্তু কোনভাবেই প্রাকৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত ও নিবন্ধিত সিআরবিতে নয়।
আশা করি আমরা প্রধানমন্ত্রীকে এই বিষয়টি অবহিত করতে পারলে তিনি কখনোই সিআরবিতে হাসপাতাল হোক চাইবেন না। কারণ তিনি প্রকৃতিবান্ধব এবং বৈশ্বিক জলবায়ু দূষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে বিশ্ব খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। তাই আমাদেরকে কিছুতেই আশাহত হলে চলবে না। আমরা মানুষের সুখ, দুঃখ, বেদনা, আশা-আখাক্সক্ষার সাথে সম্পৃক্ত তাদেরকে মনে রাখতে হবে সত্য সবসময় চির জাগ্রত।
তিনি প্রশ্ন করেন প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছেন। কিন্তু স্থান কোথায় হবে তা তিনি উল্লেখ করেন নি। অবাক লাগে সিআরবিতে এই হাসপাতাল করার পেছনে যারা উঠে পড়ে লেগেছেন তাদের স্বার্থটা কী? আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না বর্তমান সরকারকে গণবিচ্ছিন্ন করার জন্য একটি অশুভ শক্তি চক্রান্ত করছে। এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবোই।
নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, দক্ষিণ জেলা আঃ লীগের সাঃ সম্পাদক মফিজুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: ইউনুস, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাঃ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সাবেক ছাত্রনেতা মো. শাহজাহান চৌধুরী, আবৃত্তি মিল্পী রাশেদ হাসান, স্বপন মজুমদার প্রমুখ।
নগর মহিলা আঃ লীগের ভারপ্রাপ্ত সাঃ সম্পাদক কাউন্সিলর নীলু নাগের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মমতাজ খান, মালেকা চৌধুরী, হাসিনা আক্তার টুনু, শারমিন ফারুক, হুরে আরা বিউটি, লায়লা আক্তার এটলী, আঞ্জুমান আরা, তসলিমা নূরজাহান রুবি, আয়েশা ইব্রাহিম, উম্মে হাবিবা গিয়াস, জেনিফার আলম, কান্তা ইসলাম মিনু।
এতে আরো উপস্থিত ছিলেন আয়েশা আক্তার পান্না, নন্দিতা দাশ গুপ্তা, শিরীন আখতার শিল্পী, রোমান ওয়াসিম, লাভলী বেগম, মনোয়ারা বেগম মনি, ফেরদৌস আরা, আয়েশা আলম, এড. সীমা আকতার, সোমা চৌধুরী, শিল্পী বড়ুয়া, শেলী দে, ময়না বেগম, এড. জোবাইদা সরওয়ার চৌধুরী, মনীষা সেন, সানিয়া কবির সানি, চেমন আরা, আয়েশা বেগম প্রমুখ।
Discussion about this post