স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের সুপারিশ অনুমোদন করেছে জাতিসংঘ। একমাত্র দেশ হিসেবে তিনটি মানদণ্ডই পূরণ করেছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম বৈঠকের ৪০তম প্লেনারি সভায় বুধবার (২৪ নভেম্বর) এ ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সুপারিশ অনুমোদনের মাধ্যমে বাংলাদেশ এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে পরবর্তী ধাপে উত্তরণের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলো।
এটি বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় একটি যুগান্তকারী অর্জন যা এমন এক সময়ে অর্জিত হল যখন আমরা বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি।
সিদ্ধান্তটি গৃহীত হবার পর বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য প্রদান করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। প্রদত্ত বক্তব্যে তিনি রেজুলেশনটি গ্রহণের ক্ষেত্রে ঐক্যমতে পৌঁছাতে সহায়তার জন্য সকল সদস্য দেশ বিশেষ করে বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদারগণকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে এবং এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশে রুপান্তরিত করার স্বপ্ন দেখেছেন। কোভিড-১৯ অতিমারির ভয়াবহতম সময়েও সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তিনি বাংলাদেশের এই অদম্য অগ্রযাত্রায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যারফলে আজ রূপকল্প-২০২১ পূর্ণতা পেল”।
স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটেগরি থেকে উত্তরিত (স্নাতক) হওয়া কেবল সুনির্দিষ্ট একটি দেশেরই সাফল্য নয়, এটি জাতিসংঘের নেতৃত্বে বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্বের শক্তির প্রমানও বটে মর্মে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, “উত্তরণ কোনোভাবেই শাস্তি হতে পারেনা, এটি হতে পারে পুরস্কার”। এ প্রসঙ্গে তিনি এলডিসি ক্যাটেগরি থেকে উত্তরিত ও উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর জন্য প্রণোদনা ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সহায়তা কাঠামো নিশ্চিত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। উত্তরণ চ্যালেঞ্জের প্রতিটি দিক বিশেষ করে উত্তরণ পরবর্তী আন্তর্জাতিক সহায়তা ব্যবস্থা, বাধাহীন উত্তরণ ও এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য অর্থায়ন ইত্যাদি চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলার উপযোগী এবং লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরিরও আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।
কাতারের দোহায় অনুষ্ঠেয় আসন্ন ৫ম জাতিসংঘ স্বল্পোন্নত দেশসমূহের সম্মেলন (এলডিসি-৫) এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, পরবর্তী দশকে এলডিসি’র দেশগুলোর জন্য একটি রুপান্তরধর্মী কর্মসূচি নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সম্মেলনটি উন্নয়ন সহযোগীদেরকে চমৎকার একটি সুযোগ এনে দিবে। দোহা প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন (ডিপিওএ) স্বল্পোন্নত দেশসমূহের উত্তরণের বিষয়টিকে এর অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলির একটি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ২০৩১ সালের মধ্যে যাতে আরও ১৫টি এলডিসিভুক্ত দেশকে উত্তরণের মানদন্ড পূরণে সক্ষম করে তোলা যায় খসড়া দোহা প্রোগ্রাম অব অ্যাকশনে সে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যের সাফল্য নির্ভর করছে মূলত উন্নয়ন অংশীদারদের সংহতি ও বাড়তি সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতির উপর।
উল্লেখ্য জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা ও কানাডার স্থায়ী প্রতিনিধি রর্বাট রে এলডিসি-৫ সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক কমিটিতে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করছেন।
Discussion about this post