দীর্ঘ ১৫ বছরের অভিনয়ের ক্যারিয়ারে চলতি বছরে বড় পর্দায় নাম লিখিয়েছেন নন্দিত মডেল ও অভিনেত্রী রাফিয়াত রশীদ মিথিলা। যখনই সিনেমাকে ‘হ্যাঁ’ বললেন, তখন থেকেই একের পর এক সিনেমার প্রস্তাব পাচ্ছেন তিনি। নাম লেখানোর ছয় মাসেই চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন পাঁচ সিনেমায়। সর্বশেষ মিথিলা অভিনয় করেছেন সরকারি অনুদানের সিনেমা ‘জলে জ্বলে তারা’ তে। অরুণ চৌধুরী পরিচালিত এ সিনেমাতে মিথিলার বিপরীতে অভিনয় করেছেন এফ এস নাঈম। মাত্র ১৬ দিনেই পুরো সিনেমার শুটিং শেষ করে গত ২৫ অক্টোবর ঢাকায় ফেরেন তিনি।
ছবিটিতে কাজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে মিথিলা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে কয়েকটা সিনেমায় কাজ করেছি, এরমধ্যে এই ছবিতে কাজ করে অনেক বেশি তৃপ্তি পেয়েছি আমি। প্রত্যেক শিল্পীর-ই কিন্তু অভিনয়ের একটা ক্ষুধা থাকে, এই কাজটি করতে গিয়ে নিজেকেই যেন নতুন করে চিনেছি আমি। এক কথায়, চমৎকার অভিজ্ঞতা। একটা সুন্দর ও গোছানো টিম হলে সেখানে কাজ করতেও অনেক স্বাচ্ছন্দ্য লাগে। পরিচালক এবং টিম এত সুন্দরভাবে কাজটা শেষ করেছে, ইটস ওয়ান্ডারফুল। অরুণ দা খুবই সুন্দরভাবে কাজটি শেষ করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ছবির প্রত্যেকটা শিল্পী দারুণ মেধাবী, তাদের সবার সঙ্গে কাজ করে আমি অনেক বেশি উপভোগ করেছি। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করতে হয়েছে আমাকে। নিজের সহশিল্পী যখন ভালো অভিনয় করে তখন আমার মধ্যেও আরও ভালো করার তাড়না জেগে উঠে। এবং পুরো ছবির কাজের ক্ষেত্রে এমনটাই হয়েছে। প্রতিটা শিল্পী এত সুন্দর ও নিখুঁত অভিনয় করেছেন যে আমি শুধু মুগ্ধ হয়ে দেখেছি, সেখানে নিজেরও ভালোর চেষ্টা না করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
আমার তখন একটাই চিন্তা ছিল যে, আমি তাদের চেয়েও যেন ভালো করতে পারি! কাজটি করতে গিয়ে অনেক কষ্টও করতে হয়েছে, তারপরও আমি উপভোগ করেছি। রোদে বৃষ্টিতে ভিজেছি, সারাক্ষণ শুধু পাড়ে আর নৌকার মধ্যেই ছিলাম। যেহেতু আমি সবসময় আরবান চরিত্রই করেছি বেশি এরকম গ্রামীণ চরিত্র করা হয়নি কখনও। রোদে পুড়ে যাওয়ার মতও অবস্থা হয়েছে আমার। আমার ক্যারিয়ারের একটি উল্লেখযোগ্য ছবি হয়ে থাকবে ‘জলে জ্বলে তারা’। এখন শুধু পর্দায় দেখার অপেক্ষায় আছি।’
এরমধ্যেই চারটি সিনেমার কাজ শেষ করেছেন। নিজেকে পর্দায় দেখার জন্য কতটা মুখিয়ে আছেন? এমন প্রশ্নে অভিনেত্রীর উত্তর, ‘আমার তো ঠিক সবসময় হলে গিয়ে সিনেমা দেখার সময় হয়ে উঠে না। প্রায়ই চেষ্টা করি সময় পেলে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার। সর্বশেষ দেখেছি কলকাতায়। এরপর ঢাকায় ফিরে তো সিনেমার কাজ শুরু করলাম। একটা একটা করে কাজের অফার আসতে শুরু করলো, সেগুলো থেকে বেছে বেছে কয়েকটা কাজ করেছি। কিন্তু এখনও নিজেকে পর্দায় দেখার সুযোগ হয়নি। আগামী বছরে ছবিগুলো মুক্তি পেলে দেখতে যাবো, সেটারই অপেক্ষায় আছি। বড় স্ক্রিণে দর্শকরা আমাকে কীভাবে দেখে এবং কীভাবে গ্রহণ করেন।’
সাম্প্রতিক ব্যস্ততা নিয়ে মিথিলা বলেন, ‘‘জলে জ্বলে তারা’ শেষ করে ঢাকায় এসে একটি নাটকের শুটিং শেষ করলাম। ‘সিনিয়র’ শিরোনামের এ নাটকটি পরিচালনা করেছেন প্রীতি দত্ত, এখানে আমার সঙ্গে অভিনয় করেছেন খায়রুল বাসার। এই মাসে আপাতত আর কোনো কাজ করা হবে না। কারণ, আগামী সপ্তাহেই আমি অফিসের কাজে আফ্রিকার সিয়েরা লিওনে যাচ্ছি, প্রায় ১৫/১৬ দিনের জন্য। এরপর চলতি মাসের শেষে দেশে ফিরবো।
এরমধ্যে কয়েকটি ওয়েব ও ফিচার ফিল্ম নিয়ে কথাবার্তা চলছে, সিনেমা নিয়েও কথা চলছে। ব্যাটে-বলে মিললে হয়তো সেগুলো করতে পারি। এরপর আবার ডিসেম্বরে কলকাতায় যেতে হবে।’
উল্লেখ্য, অভিনেত্রীর বাইরেও মিথিলা একজন গবেষক, শিক্ষক, কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার। শুধু তাই নয়, তিনি একজন লেখক এবং উন্নয়ন কর্মীও। গবেষণা বিষয়ক লেখালেখির পাশাপাশি শিশুদের জন্য বই লিখেন তিনি। তিনি গত ১৪ বছর ধরে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যুক্ত আছেন, প্রতিষ্ঠানটির আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্টের প্রধান হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়াও তিনি ইউনিভার্সিটি অব জেনেভা’র ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন ডিপার্টম্যান্টের একজন অধ্যাপকের তত্ত্বাবধানে ‘আরলি চাইল্ডহুড এডুকেশন’ বিষয়ে পিএইচডি করছেন। পিএইচডি’র বিষয়ে অনুমতি পাওয়ার পর বর্তমানে এই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি।